নারায়ণগঞ্জের আবু সালেহ ক্যান্সারের টিকা আবিস্কার করলেন - News Daily Bangladesh-Latest Online Popular Bangla Newspaper

Breaking

Home Top Ad

Responsive Ads Here

Post Top Ad

Responsive Ads Here

Friday, November 25, 2022

নারায়ণগঞ্জের আবু সালেহ ক্যান্সারের টিকা আবিস্কার করলেন

মানুষের কল্যাণে পৃথিবীতে যুগে যুগে বিজ্ঞানীদের নানান আবিষ্কার ব্যবহার হয়ে আসছে। মানবদেহের জন্য তথা মানুষের জীবনকে সুরক্ষা দিতে এ যাবৎকাল যত কিছু আবিষ্কৃত হয়েছে তার মধ্যে ঔষধ অন্যতম। চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন রোগের প্রতিষেধক, টিকা, ঔষধ আবিস্কার করে পৃথিবীর মানুষ জাতির কাছে চিরসম্মরণীয় হয়ে আছেন


বর্তমান বিশ্বে ক্যান্সার অনেক জটিল রোগের মধ্যে অন্যতম একটি রোগ। বিশ্বব্যাপী চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা এই ক্যান্সার রোগ নিরাময়ে দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করে আসছেন। নারায়ণগঞ্জের এক কৃতি সন্তান এরি ধারাবাহিকতায় মানব জাতিকে ক্যান্সার মুক্ত করতে প্রতিষেধক আবিস্কারে নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। যার জন্ম হয়েছে জেলার বন্দর থানাধীন লাঙ্গলবন্দ গ্রামে। তার নাম আবু সালেহ।  নামের বাংলা শাব্দিক অর্থ- পবিত্র বা পূন্যবানের পিতা। যা এ বিজ্ঞানীর কর্মজীবন, চারিত্রিক দৃঢ়তা এবং সততার এক চমৎকার সংমিশ্রণে নামের যথার্থতা ফুঁটে উঠেছে। আবু সালেহ’র মাঝে রয়েছে এক যাদুকরী উদ্ভাবনী শক্তি। তিনি সেই যাদু বলে এ যাবৎ ৮টিরও অধিক নতুন আবিষ্কার করেছেন। ১৯৮৩ সালে ৮ম শ্রেনীতে অধ্যয়নরত অবস্থায়ই তিনি প্রথম আবিষ্কার করেন পাম্প বা হাওয়া ও সলতে বিহীন জ¦ালানী সাশ্রয়ী মাল্টিফুয়েল কুকিংবার্ণার। যা আশির দশকের মাঝামাঝিতে কেরো-গ্যাস চুলা নামে বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করে। পরিবেশ বান্ধব “গ্রীণ এনার্জি” আবিষ্কারে তিনি দুইটি প্যাটেন্ট রাইটস পেয়েছেন, যার নম্বর যথাক্রমে ১৭৫/২০১১/৪৬১/১০০৫৩৪৫ এবং ১৯৫/২০১২/৪২০/১০০৫৪৪৮।


সৌদী আরবের এক লাইব্রেরীতে লাইব্রেরীয়ান হিসেবে আবু সালেহ কর্ম-জীবন শুরু করেন। দীর্ঘ প্রবাস জীবন শেষে দেশে ফিরে এসে গাজী গ্রুপে কনসালটেন্ট হিসেবে যোগদান করেন। এরপর পেন্টা বিডি লিঃ নামে আরেকটি কোম্পানীতে চীফ রিসার্চার (সাইন্টিষ্ট) হিসেবে যোগদান করেন। সেখানে তার গবেষণার বিষয় বস্তু ছিল “ওষুধ নয় খাদ্যেই সুস্থ”। ২০১৭ সালে তিনি চাকুরী হতে ইস্তফা দেন। শেষ হয় তার বৈচিত্রময় চাকুরী জীবন। পেশাগত কাজে তিনি ভারত, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, হংকং, সংযুক্ত আরব আমিরাত প্রভৃতি দেশ ভ্রমন করেন। এপি ঔষধালয় লিঃ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত নূর মাজিদ আয়ূর্বেদিক কলেজ এন্ড হাসপাতাল বনশ্রী, ঢাকায় বর্তমানে তিনি সাইন্টিষ্ট হিসেবে আছেন। কলেজ ক্যাম্পাসের ল্যাবরেটরীতে চলছে তার গবেষণা।


বিজ্ঞানী আবু সালেহ এন্টি ক্যান্সার ওষুধ আবিষ্কারের পর ওষুধটি নিয়ে আরো ব্যাপক পরিসরে গবেষণার জন্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করে চিঠি প্রদান করেন। এরপর অবহিত করেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রনালয় এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রনালয়, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মহোদয়গণকে। স্বাস্থ্য সেবা
বিভাগের সচিব মহোদয় ২১-১০-২০১৯ তাং: ৪৫.১৭০.০০১.০০.০০.০০২.২০১৪/২৭৩ নং চিঠিতে দায়িত্ব দেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, পরিচালক, মহাখালীকে। কিন্তু ১৭/১১/২০১৯তাং: ১/২০১৫/৬৪০০/১(১) চিঠিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর পরিচালক, মহাখালী জানায় ক্যন্সার প্রতিষেধকটির গবেষণার সুযোগ তাদের নেই। এ সুবিধা
আছে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের।


অতঃপর তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চিঠি দুইটি সংযুক্তি করে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর চিঠি দেন। কিন্তু আজ অবধি ওষুধ প্রশাসন কর্তৃপক্ষ সে চিঠির উত্তর দেয়নি। অতঃপর তিনি বিসিএসআইআর এবং আইসিডিডিআরবি-কে চিঠি দেন। আইসিডিডিআরবি কর্তৃপক্ষ ফোন করে জানায় তাদের এ সুবিধা নেই। বিসিএসআইআর হতে ফোন করে জানায় চেয়ারম্যান মহোদয়ের সাথে সাক্ষাতের জন্য। নির্ধারিত তারিখে আবু সালেহ্ উপস্থিত হলে চেয়ারম্যান মহোদয়ের সভাপতিত্বে বিসিএসআইআর এর ৩জন সাইন্টিষ্টের উপস্থিতিতে মিটিং হয় এবং সভা শেষে তারা সিদ্ধান্তে জানান, গবেষনার যাবতীয় ব্যয়-ভার এবং প্রতিষেধকটি কিভাবে ও কোন উপাদানে তৈরি হয়েছে তা বিসিএসআইআর এর কাছে জমা দিতে হবে। গবেষণাটি শেষ হলে পেটেন্ট রাইটস এর মালিকানা থাকবে নিয়মানুযায়ী বিসিএসআইআর এর। তাঁদের এ প্রস্তাবে আবু সালেহ রাজী হতে পারেননি। এরপর তিনি তার সীমিত সম্পদ ও সুযোগের মধ্যেই প্রতিষেধকটি নিয়ে গবেষনা চালিয়ে যেতে থাকেন এবং পর্যায়ক্রমে নূর মাজিদ আয়ুর্বেদিক কলেজ (এনএমএসি) সাইন্সল্যাব বিসিএসআইআর ও ময়মনসিংহ ইউনিভার্সিটির (বিএইউ) ডিপার্টমেন্ট অব বায়োকেমিষ্ট্রি, ডিপার্টমেন্ট অব ফার্মাকোলজী এবং ডিপার্টমেন্ট অব মাইক্রোবায়োলজী এন্ড হাইজিন ল্যাবরেটরী গুলোতে নানাবিধ পরীক্ষা চালাতে থাকেন এবং চমক প্রদক সফলতাও আসতে থাকে।


এমতাবস্থায় বিগত ১৭ই নভেম্বর ২০১৯ নয়া দিগন্তে এ সংক্রান্ত একটি খবর প্রকাশ হওয়ার পর দেশের নানা প্রান্ত হতে ক্যান্সার আক্রান্তদের স্বজনগণ আবু সালেহ্র সাথে যোগাযোগ করেন। কিন্তু তিনি সবাইকে ওষুধ না দিয়ে মাত্র ২০ জন রোগী বাছাই করেন। যাদের অবস্থা সর্বশেষ স্টেজে- বাঁচার আশা ছিলনা এবং প্রায় প্রতিজনই ছিলেন পেলিয়াটিভ কেয়ারের মেটাষ্টেটিস রোগী। ঐ পর্যায় থেকে অপারেশন ছাড়াই ১৬ জন রোগী ক্যান্সার মুক্ত হন। ক্যান্সার আক্রাান্ত রোগী গুলো হলো- স্টোমাক ক্যান্সার আক্রান্ত ৪ জন, রেকটাম ক্যান্সার আক্রান্ত ৪ জন, ব্রেষ্ট ক্যান্সার আক্রান্ত ২ জন, ইউরোনারি বøাডার ক্যান্সার আক্রান্ত ২ জন, মাল্টিপল মাইওলোমা ক্যান্সার আক্রান্ত ২ জন, টাংগ ক্যান্সার আক্রান্ত ১ জন এবং প্রোষ্টেট ক্যান্সার আক্রান্ত ১ জন। সিটি স্ক্যান,প্যাট সিটি স্ক্যান,এমআরআই, ঊহফড়ংপড়ঢ়ু, ঈড়ষড়হড়ংপড়ঢ়ু, ঝরংঃড়ংঃযপড়ঢ়ু ইত্যাদি পরীক্ষার মাধ্যমে দেখা গেছে প্রায় উক্ত ক্যান্সারে আক্রান্ত ২০ জন রোগীর মধ্যে ৮০ শতাংশ রোগীই ৫ হতে ৬ মাসের মধ্যে ক্যান্সার মুক্ত হয়েছেন। আর ২০ শতাংশ রোগী ৭ হতে ৮ মাসে সুস্থ হয়েছেন।


ক্যান্সার ওষুধে যারা আবুসালেহ উদ্ভাবিত পন্থায় সুস্থ হয়েছেন, সেসব রোগীদের এবং তাদের অভিভাবকদের সাথে এই প্রতিবেদকের কথা হয়েছে। তারা প্রত্যেকেই বলেছেন যে, তারা এবং তাদের রোগী এখন সুস্থ আছেন ও পেশাগত কর্ম-জীবনে ফিরে এসেছেন। লক্ষনীয় যে, ক্যান্সার হতে সুস্থ হওয়া সেসব রোগীদের প্রত্যেকের সাথে একটা বিষয়ে মিল পাওয়া গেছে যে, ওষুধ শুরুর ২ সপ্তাহের মধ্যেই শরীরের বাজে অনুভূতি, জ¦র, ব্যাথা, ক্ষুধা-মন্দাসহ ইত্যাদি সমস্যা গুলি প্রায় ৫০
ভাগ সেরে গিয়েছিল এবং উত্তরোত্তর  তারা যে সুস্থ হচ্ছেন এটা বুঝতে পেরেছিলেন। সত্যিই যা চিকিৎসা জগতে মাইলফলক। বাংলাদেশের গর্ব বিজ্ঞানী আবু সালেহ কর্তৃক উদ্ভাবিত ক্যান্সারের ওষুধটি কি ভাবে কাজ করে এবং এর সুফল কুফল সম্পর্কে একটি ধারনা তুলে ধরা হলোঃ-


ওষুধটি যেভাবে কাজ করেঃ ওষুধটি টোপোআইসোমারেস প্রতিরোধের মাধ্যমে উক্ত প্রসেসিং এ্যানজাইম যা উঘঅ-তে সুপার কোয়েলিং দূর করে, যা সাধারণত কোষ বিভাজনে প্রয়োজনীয়। কোষের জিন মিউটিশন এবং কোষ গুলির এ্যানজাইম তৈরীতে বাঁধা প্রদান করার ফলে ক্যান্সার কোষের বিস্তার, কলোনী গঠন, মাইগ্রেশন বন্ধ হয় এবং ঠঊএঅ-অ প্রকাশকে হ্রাস ও অ্যাপোপটিসসকে প্ররোচিত করে। ঞণচঊ ১-ই টোপোআইসোমারেস (ঞড়ঢ়-১) নির্দিষ্ট কিছু টিউমারকে অত্যাধিক প্রভাবিত করে ও এই এ্যানজাইমকে টার্গেট করে ক্যান্সার নির্মূলে তথা ওষুধ হিসেবে কাজ করে এবং সর্বশেষ ক্যান্সার সেলকে সমূলে ধ্বংস করে।


পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াঃ স্বনামধন্য সরকারি ২টি বিশ্বিবিদ্যালয়ের
ডিপার্টমেন্ট অব ফার্মেসী, ডিপার্টমেন্ট অব বায়োকেমিস্ট্রি, ডিপার্টমেন্ট অব ফার্মাকোলজী এবং ডিপার্টমেন্ট অব মাইক্রোবায়োলজী এন্ড হাইজিন ল্যাবরেটরী গুলোতে নানাবিধ পরীক্ষা এবং দীর্ঘ গবেষণায় দেখা গেছে যে, নির্দিষ্ট মাত্রায় ওষুধটি গ্রহণে ন্যূনতম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই এবং সম্পূর্ণ নিরাপদ প্রমাণিত হয়েছে।


ওষুধটির আরও কিছু গবেষণা বাকী রয়েছে বলে জানান বিজ্ঞানী আবু সালেহ। সেগুলো শেষ হলে বৃহত্তর ট্রায়ালে ওষুধটির ফলাফলানুযায়ী বাজারজাতের বিষয়টি আসবে। ওষুধটি ৫০০সম করে ১২ ঘন্টা পর পর খেতে হয়। ওষুধ চলাকালীন কার্বোহাইড্রেট খাবার গুলো কমিয়ে দিতে হয় এবং উচ্চ প্রোটিনযুক্ত খাবারগুলো বেশি খেতে হয়।


তিনি আরো জানান, ওষুধটি ন্যাচারাল (হার্বাল, ইউনানি, আয়ূর্বেদিক) ফর্মূলারীতে গবেষণা হচ্ছে, ন্যাচারাল ফর্মূলারীতেই উল্লেখিত ফলাফল পাওয়া গেছে। তার রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্ট সহযোগীতায় ছিলেন প্রফেসর ড. রফিকুল ইসলাম, প্রফেসর ড. এম. হোসাইন, প্রফেসর ডা: মুহাম্মদ মামুন মিয়া, প্রফেসর ডা: মাহ্মুদা আক্তার, প্রফেসর ডা: জাকির হোসেন এবং লায়ন আব্দুল্লাহ্ সেলিম প্রমুখ। বিজ্ঞানী আবু সালেহ্ এর সাথে যে কেউ যেকোন প্রয়োজনে চিকিৎসা সংক্রান্ত অথবা তার উদ্ভাবিত ওষধ সম্পর্কে জানতে তার ব্যবহৃত ০১৯৭৩-৯৩৭৭২৭ অথবা ০১৭০৬-৮৮০৯১০ এই মোবাইল নাম্বারে যোগাযোগ করতে পারবেন বলে উল্লেখ করেন।

No comments:

Post a Comment

Post Bottom Ad

Responsive Ads Here