অবশেষে বাংলাদেশে ফিরতেই হচ্ছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের স্বঘোষিত ঘাতক রাশেদ চৌধুরীকে। ফিরিয়ে নেওয়ার পরিক্রমায় লাগাতার লবিংয়ের সুফল আসছে। গত ১৭ জুন মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল উইলিয়াম বার এক বিশেষ নির্দেশে ঘাতক রাশেদ চৌধুরীর অ্যাসাইলামের সব নথি চেয়েছেন। ২০০৬ সালে রাশেদ চৌধুরীর অ্যাসাইলাম মঞ্জুর করা হয় বহু পথ মাড়িয়ে। দীর্ঘ ১৪ বছর পর ওই ফাইল পুনরায় পর্যালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে রাশেদ চৌধুরীর আইনজীবী মার্ক ভ্যান ডার হোট শঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে, ট্রাম্প প্রশাসন বাংলাদেশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ পদক্ষেপ নিয়েছে। ‘দীর্ঘদিন আগে চূড়ান্তভাবে নিষ্পত্তি হওয়া একটি আবেদনকে পুনরায় সামনে আনার ঘটনায় অন্য অ্যাসাইলাম প্রার্থীর মধ্যে ভীতির সঞ্চার ঘটছে’ বলেও মন্তব্য করেন অ্যাটর্নি মার্ক।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে এ মোমেন গত বছর ওয়াশিংটন ডিসিতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী পম্পেওর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে ঘাতক রাশেদ চৌধুরীকে অবিলম্বে বাংলাদেশের কাছে সোপর্দ করার আহ্বান জানান। এরপর যতবার কথা হয়েছে পম্পেওর সঙ্গে প্রতিবারই সে আহ্বানের পুনরুল্লেখ করেছেন ড. মোমেন। ড. মোমেন পাশাপাশি ঢাকাস্থ মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গেও এ ইস্যুতে বেশ কয়েক দফা কথা বলেছেন। ওয়াশিংটন ডিসিভিত্তিক গণমাধ্যম ‘পলিটিকো ডট কম’ ২৪ জুলাই ভোরে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন রাশেদের অ্যাসাইলাম বাতিল করে বাংলাদেশে ফিরিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া সম্পর্কিত তথ্য উল্লেখ করেছে। সেখানেই ড. মোমেনের সর্বশেষ ফোনালাপ এবং বাংলাদেশের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের ফলে ঘাতক রাশেদ চৌধুরীকে ফিরিয়ে দেওয়ার প্রসঙ্গ উপস্থাপিত হয়েছে।
উল্লেখ্য, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় রাশেদ চৌধুরীর বিরুদ্ধে দেওয়া রায়ের কপি ইতিপূর্বে মার্কিন বিচার বিভাগে হস্তান্তর করা হয়েছে। সে আলোকে রাশেদ চৌধুরীর অ্যাসাইলাম মঞ্জুরির সব যুক্তি-তর্ক অবলুপ্ত হয়ে যাবে। তাকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কারের পথ সুগম হবে। নিউইয়র্কের একজন অ্যাটর্নি নাম গোপন রাখার অঙ্গীকারে এ সংবাদদাতাকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
জানা গেছে, রাশেদ চৌধুরী বর্তমানে বসবাস করছেন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার কনকর্ড সিটির হাকেলবেরি ড্রাইভের নিজ বাসায়। বঙ্গবন্ধুর এই ঘাতক এর আগে ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ জয়ী হওয়ার পরই ব্রাজিল থেকে সপরিবারে যুক্তরাষ্ট্রে এসে রাজনৈতিক আশ্রয় চান। তার দুই ছেলে ক্যালিফোর্নিয়ার দুটি প্রাইভেট কলেজে অধ্যয়ন শেষে চাকরি করছেন। অত্যন্ত জাঁকজমকপূর্ণভাবে বছরখানেক আগে তার ছোট ছেলের বিয়ে হয়। বিভিন্ন নাম ধারণ করে রাশেদ চৌধুরী নিউইয়র্ক, কানাডাসহ বিভিন্ন স্থান থেকে প্রকাশিত সংবাদপত্র এবং অনলাইন পোর্টালে লেখালেখি করছিলেন। তার নেটওয়ার্কে রয়েছে জামায়াত-শিবির এবং ফ্রীডম পার্টির অর্থে নিউইয়র্ক ও ক্যালিফোর্নিয়ায় দুটি মিডিয়া সিন্ডিকেট। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত প্রবাসীদের মধ্যে উইলিয়াম বারের সর্বশেষ এ উদ্যোগে স্বস্তি এসেছে।
যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন, নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগ, ইউএস কমিটি ফর সেক্যুলার অ্যান্ড ডেমোক্র্যাটিক বাংলাদেশের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিচার বিভাগ চাইলে তারাও প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত দিয়ে সহায়তা করবেন। স্মরণ করা যেতে পারে, বঙ্গবন্ধুর ঘাতক হিসেবে মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত অন্য পলাতক মোসলেহ উদ্দিনকে কয়েক বছর আগে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কার করা হয় অ্যাসাইলামের আবেদন নাকচ করে। প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ৭ নভেম্বরর নিউইয়র্ক টাইমসে এক নিবন্ধে সজীব ওয়াজেদ জয় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট রাতে কীভাবে বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে সপরিবারে হত্যা করা হয়, তার বিবরণীর পাশাপাশি ঘাতকদের অবস্থানও উপস্থাপন করেছিলেন। তার পরই মূলত মার্কিন মুলুকে সুধীজনের মধ্যে প্রচ- নাড়া পড়ে যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে থাকা ঘাতকদের ব্যাপারে। কূটনৈতিক তৎপরতা সেই ধারাবাহিকতায় অব্যাহত থাকে। এদিকে, বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেনের লাগাতার লবিং যথেষ্ট ভূমিকা রাখছে বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন। মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেলের এ পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে শিগগিরই ঘাতক রাশেদ চৌধুরীকে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের কাছে সোপর্দ করা হবে বলে সবাই মনে করছেন।
No comments:
Post a Comment