কুষ্টিয়ায় দুর্বৃত্তরা বঙ্গবন্ধুর নির্মাণাধীন ভাস্কর্য ভাঙচুর করেছে

দুর্বৃত্তরা কুষ্টিয়ায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মাণাধীন ভাস্কর্য ভাঙচুর করেছে। ওই ভাস্কর্যের ডান হাত, পুরো মুখম-ল ও বাঁ হাতের অংশবিশেষ শুক্রবার রাতের আঁধারে ভেঙে ফেলা হয়েছে। বিষয়টি গতকাল সকালে গোচরীভূত হলে শহরের বঙ্গবন্ধু সুপার মার্কেট চত্বর ও থানা মোড়ে আওয়ামী লীগ, জাসদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক-সামাজিক সংগঠন বিক্ষোভ সমাবেশ, মিছিল ও মানববন্ধন করে।

কুষ্টিয়া পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম জানান, গত মাসে শহরের ব্যস্ততম পাঁচ রাস্তার মোড়ে পৌরসভার উদ্যোগে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। তিনি জানান, একই বেদিদে বঙ্গবন্ধুর তিন ধরনের তিনটি ভাস্কর্য নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া জাতীয় চার নেতার ভাস্কর্যও থাকবে এ বেদিতে। এরই মধ্যে বঙ্গবন্ধুর একটি ভাস্কর্য স্থাপনের কাজ সম্পন্নের পথে। দুবর্ৃৃত্তরা শুক্রবার দিবাগত রাতে হঠাৎ করে ভাস্কর্যটির ডান হাত, পুরো মুখম-ল ও বাঁ হাতের অংশবিশেষ ভেঙে ফেলে।

এ ঘটনা গতকাল সকালে জানাজানি হলে জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। সকালে ঘটনার  প্রতিবাদে আওয়ামী লীগ, জাসদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক-সামাজিক সংগঠন বিক্ষোভ সমাবেশ, মিছিল ও মানববন্ধন করে। ভাস্কর্যটির ভাস্কর মাহাবুব জামান শামীম জানান, ইতিহাস-ঐতিহ্য সংরক্ষণে তারা দেশের বিভিন্ন ভাস্কর্য নির্মাণ করেন। তাদের সব সময় এ কারণে একটি মহলের চাপে থাকতে হয়। বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের প্রতীক ছিল কুষ্টিয়ার এ ভাস্কর্যটি। ভাস্কর্যটি ভাঙচুরের মতো দুঃসাহস যারা দেখিয়েছে তাদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি জানান তিনি।

সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন কুষ্টিয়া শাখার সাধারণ সম্পাদক কারশেদ আলম জানান, এটি খুবই গর্হিত অপরাধ। দেশে এসব করে মৌলবাদী অপশক্তি একটা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে। এদের সম্মিলিতভাবে প্রতিহত করার জন্য সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি। কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার এস এম তানভির আরাফাত জানান, সিসি টিভির ফুটেজ দেখে ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের শিগগিরই আইনের আওতায় আনা হবে। ঘটনাস্থল কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক আসলাম হোসেন পরিদর্শন করেছেন।

বিএনপি কার্যালয়ে ভাঙচুর, ফাঁকা গুলি : গতকাল বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মাণাধীন ভাস্কর্য ভাঙচুরের ঘটনায় কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির কার্যালয়ে ভাঙচুর করেছে দুর্বৃত্তরা। অন্যদিকে কুষ্টিয়া শহরের পাঁচ রাস্তা মোড়ে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে বঙ্গবন্ধুর নির্মাণাধীন ভাস্কর্যের সামনে ফাঁকা গুলি ছোড়ার খবর পাওয়া গেছে। জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক আবদুুর রাজ্জাক বাচ্চু অভিযোগ করেন, বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে জেলা বিএনপির কার্যালয়ে এ হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এ সময় অফিসের চেয়ার-টেবিলসহ আসবাবপত্র ভাঙচুর করা হয়। সভাপতি সৈয়দ মেহেদী আহম্মেদ জানান, দুপুরে কার্যালয়ে বৈঠকের পর বেলা ৩টার দিকে নেতা-কর্মীরা কার্যালয় ছেড়ে বাড়ি যান।

কার্যালয় খোলা ছিল, সেখানে শুধু একজন পিয়ন ছিলেন। বিকাল ৫টার দিকে জানতে পারেন কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করা হয়েছে। পুলিশকে বিষয়টি জানানো হয়। এদিকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ভাঙচুর হওয়া বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের সামনে ফাঁকা গুলি ছোড়ে দুর্বৃত্তরা। পরে ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ছাই রঙের একটি নোহা গাড়ি কুষ্টিয়া শহরের পাঁচ রাস্তা মোড়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের সামনে আসে। এক ব্যক্তি এ সময় গাড়ির ভিতর থেকে অস্ত্র বের করে ফঁাঁকা গুলি ছোড়েন। এরপর দ্রুত তারা গাড়ি নিয়ে চলে যান। সেখানে উপস্থিত পুলিশ লাইনসের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মকছেদুর রহমান এ ঘটনা সরাসরি প্রত্যক্ষ করেন। তবে তাদের তিনি আটকাতে পারেননি।

মির্জা ফখরুল বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুরের নিন্দায় : বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কুষ্টিয়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মাণাধীন ভাস্কর্য ভাঙচুরের ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। গতকাল দলটির ভারপ্রাপ্ত দফতর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে তিনি এ নিন্দা জানান। বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব অভিযোগ করেন কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির কার্যালয়ে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের নেতারা হামলা চালিয়েছে। মির্জা ফখরুল বলেন, বিকালে ছাত্রলীগের একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসী কোনো কারণ ছাড়াই মিছিল সহকারে প্রকাশ্যে কুষ্টিয়া জেলা বিএনপি কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট করে।

 তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার দেশ পরিচালনায় ও জনসমস্যা নিরসনে সীমাহীন ব্যর্থতা এবং দুর্নীতি, লুটপাট, দুঃশাসন আড়াল করতে পরিকল্পিতভাবে সংঘাত সৃষ্টি করার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। এ কারণেই সংঘাত ও বিবাদ সৃষ্টি করতে উসকানিমূলক কর্মকান্ড পরিচালনা করছে।

আরও পড়ুনঃ মোটরসাইকেল আরোহীর ট্রেনের ধাক্কায় মৃত্যুবরণ

গত সপ্তাহে মাগুরা জেলা বিএনপির কার্যালয়ে অতর্কিত হামলা চালানোর পর এবার বিনা কারণে আকস্মিকভাবে কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়েছে।