স্বাধীনতার ঘোষক শেখ মুজিব আত্মসমর্পণকারী নিয়াজীর গ্রন্থেও, কোথাও নেই জিয়ার নাম - News Daily Bangladesh-Latest Online Popular Bangla Newspaper

Breaking

Home Top Ad

Responsive Ads Here

Post Top Ad

Responsive Ads Here

Thursday, August 20, 2020

স্বাধীনতার ঘোষক শেখ মুজিব আত্মসমর্পণকারী নিয়াজীর গ্রন্থেও, কোথাও নেই জিয়ার নাম


'বাংলাদেশ' নামক রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর যে ব্যক্তিটির আত্মসমর্পণের মাধ্যমে, সেই পাকিস্তান ইস্টার্ন কমান্ডের জেনারেল এএকে নিয়াজির যুদ্ধ নিয়ে রচিত "দ্য বিট্রেয়াল অব ইস্ট পাকিস্তান" নামক গ্রন্থে শেখ মুজিবুর রহমানের নামই উঠে এসেছে পাকিস্তানের প্রতিপক্ষ হিসেবে। 





শেখ মুজিবকে স্বাধীনতার ঘোষণাদানকারীও বলা হয়েছে। গ্রন্থটিতে জেনারেল ওসমানীর নাম এসেছে মুক্তিবাহিনীর নেতৃত্বদাতা হিসাবে।গ্রন্থটিতে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে ২৭ মার্চে মেজর জিয়ার স্বাধীনতার ঘোষণার কোন অস্তিত্ব নেই।





'৭১ এর যুদ্ধের প্রকৃতি, পাকিস্তানের ভাঙন, যুদ্ধ পরিকল্পনা, আক্রমণ, পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনী, আলবদর, আলসামসহ রাজাকার বাহিনী, যুদ্ধ শিবির, গোপনীয় রিপোর্ট, প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান, পাকিস্তান সেনাপ্রধান জেনারেল আবদুল হামিদ খানের ভূমিকা এবং বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথকমান্ড, তথা মিত্রবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডার লে. জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার কাছে আত্মসমর্পণের প্রেক্ষিত ও বাধ্যবাধকতার নিখুঁত বর্ননা করা হয়েছে গ্রন্থটিতে।





পাকিস্তান ভাঙার জন্য লে. জেনারেল নিয়াজি শুধু জেনারেল ইয়াহিয়া, জেনারেল টিক্কা খান ও জুলফিকার আলী ভুট্টোকে দায়ীই করেননি, তাদের তিনজনকে পাকিস্তানের বিশ্বাসঘাতক হিসেবে অভিহিত করেছেন। নিয়াজি বিশ্বাস করতেন, পূর্ব পাকিস্তান সংকট একটি রাজনৈতিক সংকট। যার সমাধান কোনো সামরিক যুদ্ধের মাধ্যমে হতে পারে না। তিনি দাবি করেছেন, পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার কাছে জরুরি বার্তায় বলেছিলেন সাধারণ নির্বাচনে বিজয়ী সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা শেখ মুজিবকে মুক্তি দিয়ে তার কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হোক। কিন্তু ইয়াহিয়া তার আবেদনে সাড়া দেননি। বাঙালিদের প্রতি পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর শোষণ নিপীড়নের কথাও স্বীকার করেছেন। যদিও নিয়াজি সেই শাসকগোষ্ঠীর নিদের্শেই দায়িত্বপালন করেছেন। সে বিষয়ে নিজস্ব মত তুলে ধরেছেন। নিয়াজি লিখেছেন, উপরের নির্দেশেই তাকে যুদ্ধে আত্মসমর্পণ করতে হয়েছে। যা চরম অপমানের, তার চেয়ে মৃত্যুবরণ করা ভালো হতো। মজার ব্যাপার হচ্ছে নিয়াজি কিন্তু আত্মমর্যাদার জন্য মৃত্যুবরণ করেননি, আত্মসমর্পণ দলিলে স্বাক্ষর করে মিত্রবাহিনীর হাতে বন্দীত্ববরণ করেন।





গ্রন্থটিতে নিয়াজি বলেছেন, জুলফিকার আলী ভুট্টো সিজারের চেয়ে পরাক্রমশালী ছিলেন। ক্ষমতাবলে হয়েছিলেন চিফ মার্শাল ল অ্যাডমিনিস্ট্রেটর, এ পদবী তিনি প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায়ও ব্যবহার করেন। যে কারণে আমার গ্রন্থটির প্রকাশ বিলম্বে হয়েছে।





প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়াকে ভারতীয় হামলা সম্পর্কে অবগত করলে, তিনি বলেন 'পূর্ব পাকিস্তানের জন্য আমি কি করতে পারি? আমি পারি কেবল প্রার্থনা করতে।'





এই বাক্যটি দ্বারা ইয়াহিয়া রাষ্ট্রপ্রধান ও সশস্ত্রবাহিনীর সর্বাধিনায়ক হিসেবে তার সকল দায়িত্ব ও কর্তব্য শেষ করেন। পশ্চিম পাকিস্তান রক্ষা করতেই আমাকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেয়া হয়।





গ্রন্থে নিয়াজি লিখেন, ভুট্টো দুজন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগের প্রস্তাব করে ‌৭১ সালের ১৪ মার্চ বলেছিলেন, তিনি নিজে হবেন পশ্চিম পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী আর মুজিব হবেন পূর্বপাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী। তিনি (ভুট্টো) 'ওধার তুম ইধার হাম' বলতে দুটি পাকিস্তানকে বুঝিয়েছিলেন। কিন্তু কোনো লাভ হচ্ছিল না। কারণ আওয়ামী লীগ এমন এক জায়গায় পৌঁছে গিয়েছিল যেখান থেকে তার ফেরার পথ ছিল না। পূর্ব পাকিস্তানে ২৩ মার্চ প্রতিরোধ দিবস পালন করা হয়। বাংলাদেশের পতাকা উড়ানো হয় মুজিবের বাসভবনে। মুজিব কর্নেল ওসমানীকে সার্বিক অপারেশনের কমান্ডার নিযুক্ত করেন। মেজর জেনারেল (অবঃ) মাজেদের তত্ত্বাবধানে সামরিক বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সদস্যদের তালিকাভুক্ত করা হয়। ভারত থেকে পূর্ব পাকিস্তানে অস্ত্র ও গোলাবারুদ আসতে থাকে। ভারতের সক্রিয় সহযোগিতায় সশস্ত্র সংগ্রামের পরিকল্পনা চূড়ান্ত হয়।





নিয়াজি লিখেছেন, মনে রাখা প্রয়োজন যে, তখনো বাঙালি সেনারা বিদ্রোহ করেনি। জেনারেল টিক্কা ২৫ ও ২৬ মার্চ মধ্যরাতে আঘাত হানেন। একটি শান্তিপূর্ণ রাত পরিণত হয় দুঃস্বপ্নে, চারদিকে আর্তনাদ, অগ্নিসংযোগ। জেনারেল টিক্কা তার সর্বশক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন যেন তিনি তার নিজের বিপথগামী লোকের সঙ্গে নয়, শত্রুর সঙ্গে লড়াই করছেন। ২৫ মার্চের সেই সামরিক অভিযানের হিংস্রতা ও নৃশংসতা বুখারায় চেঙ্গিস খান, বাগদাদে হালাকু খান এবং জালিয়ানওয়ালাবাগে ব্রিটিশ জেনারেল ডায়ারের নিষ্ঠুরতাকেও ছাড়িয়ে যায়। সশস্ত্র বাঙালি ইউনিট ও ব্যক্তিবর্গকে নিরস্ত্র এবং বাঙালি নেতৃবৃন্দকে গ্রেফতার করার জন্য টিক্কা খানকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি এ দায়িত্ব পালন করার পরিবর্তে বেসামরিক লোকজনকে হত্যা এবং পোড়া মাটি নীতি গ্রহণ করেন। তিনি তার সেনাদের নির্দেশ দিয়েছিলেন, 'আমি মাটি চাই মানুষ নয়।' মেজর জেনারেল ফরমান ও বিগ্রেডিয়ার জাহানজেব আরবাব ঢাকায় তার এ নির্দেশ পালন করেন। জেনারেল রাও ফরমান তার টেবিল ডায়েরিতে লিখেন, 'পূর্ব পাকিস্তানের শ্যামল মাটি লাল করে দেয়া হবে। 'বাঙালির রক্ত দিয়ে মাটি লাল করে দেয়া হয়েছিল।'৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর বাঙালিরা গভর্নর হাউজ (বঙ্গভবন) অবরোধ করার পর তারা ফরমানের ডায়েরি খুঁজে পায়। বাংলাদেশ সফরকালে মুজিব ভুট্টোকে এ ডায়েরি দেখিয়েছিলেন। নিয়াজি লিখেন, আমার সঙ্গে সাক্ষাৎকালে ভুট্টো এ ডায়েরি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিলেন। তাকে আমি বলেছিলাম, আমি এ ব্যাপারে কিছুই জানতাম না।





জেনারেল টিক্কা তার ওপর ন্যস্ত দায়িত্ব পালন থেকে সরে যাওয়ায় সকল বাঙালি সশস্ত্র ব্যক্তি ও ইউনিট তাদের অস্রশস্ত্র, গোলাবারুদ, সাজসরঞ্জাম ও পরিবহন নিয়ে পালিয়ে যায়। এবং মুক্তিবাহিনীতে যোগদান করে।... মুজিব ছাড়া সকল নেতৃবৃন্দ পালিয়ে যায় এবং কলকাতায় প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার গঠন করে। ২৫ ও ২৬ মার্চ সামরিক অভিযান শুরু হওয়ার আগে ইয়াহিয়া ঢাকা ত্যাগ করেন। ঢাকা ত্যাগের আগে তিনি টিক্কাকে বলেছিলেন, 'তাদেরকে খুঁজে বের করো।' টিক্কার নিষ্ঠুরতা দেখার জন্য ভুট্টো ঢাকায় থেকে গেলেন। ভুট্টো দেখতে পেলেন ঢাকা জ্বলছে। 


1 comment:

Post Bottom Ad

Responsive Ads Here