ভারতীয় বংশোদ্ভূত সাবেক অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনাক প্রথমবারের মতো বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ব্রিটেনের ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির নেতা নির্বাচিত হয়েছেন। ফলে, এই প্রথম একজন ব্রিটিশ এশিয়ান রাজনীতিক ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী হতে চলেছেন। ঋষি সুনাকই হবেন দলের পরবর্তী নেতা এবং দেশের প্রধানমন্ত্রী নিশ্চিত করে জানিয়েছেন কনজারভেটিভ পার্টির নেতৃত্ব নির্বাচনকারী এমপি কমিটির প্রধান স্যার গ্রেম ব্রেডি।
বরিস জনসন চলতি বছর অর্থাৎ ২০২২ সালের মাঝামাঝি মিথ্যা বলার কেলেঙ্কারিতে পড়ে প্রধানমন্ত্রীত্ব ছাড়তে বাধ্য হওয়ার পর ঋষি সুনাক নেতৃত্বের নির্বাচনে হেরে গিয়েছিলেন। কিন্তু তাকে হারিয়ে যিনি দলের নেতা এবং প্রধানমন্ত্রী হন, সেই লিজ ট্রাস মাত্র দেড় মাস ক্ষমতায় থাকার পর গত সপ্তাহে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। মি. সুনাক এর পরপরই আবারও নেতৃত্বের জন্য তার প্রার্থিতা ঘোষণা করেন। শেষ পর্যন্ত অন্য কেউ তাকে চ্যালেঞ্জ না করায় ঋষি সুনাকই কনজারভেটিভ দলের নেতা এবং সেইসাথে প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন।
যার ফলে গত মাসে সেপ্টেম্বরে নেতৃত্বের নির্বাচনে যিনি হেরে গিয়েছিলেন, পরের মাসেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তিনি জিতে গেলেন। ধারণা করা হচ্ছিল ঋষি সুনাককে মন্ত্রী এবং প্রভাবশালী এমপি পেনি মর্ডান্ট এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন চ্যালেঞ্জ করতে পারেন। কিন্তু বরিস জনসন রোববার রাতেই জানিয়ে দেন তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন না। আর আজ (সোমবার) বেলা দুটোয় প্রার্থিতা ঘোষণার সর্বশেষ সময় পার হয়ে যাওয়ার ঠিক আগে মিজ মর্ডান্টও জানিয়ে দেন তিনি নেতা নির্বাচনের এই দৌড়ে যোগ দিচ্ছেন না। বিবিসির সংবাদদাতা নিক আর্ডলি বলছেন মি. সুনাক আগামীকাল (মঙ্গলবার) আনুষ্ঠানিকভাবে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিতে পারেন।
মাত্র ৪২ বছর বয়সী সাবেক অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনাক বিপুল সংখ্যক এমপির সমর্থন নিয়ে কনজারভেটিভ পার্টির নেতা হয়েছেন। পূর্ব আফ্রিকা থেকে ব্রিটেনে পাড়ি জমিয়েছিলেন সুনাকের বাবা-মা। তার বাবা-মা উভয়ই ছিলেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত। ব্রিটেনের সাউদাম্পটনে ১৯৮০ সালে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। সুনাকের বাবা যশবীর ও মা ঊষা। দুজনই ভারতের পাঞ্জাবের বাসিন্দা ছিলেন। পড়াশোনা আর ভালো কাজের আশায় তারা বিদেশে পাড়ি দিয়েছিলেন। যশবীর ব্রিটেনে একজন জেনারেল প্র্যাকটিশনার এবং ঊষা ফার্মাসিস্ট হিসেবে কাজ করেছিলেন। ঋষি সুনাক উইনচেস্টারের প্রাইভেট স্কুল উইনচেস্টার কলেজে পড়াশোনা করেছেন। শিক্ষাজীবনে গ্রীষ্মের ছুটিতে সাউদাম্পটনে ফিরে কারি হাউসে ওয়েটার হিসাবেও কাজ করেছেন তিনি। পরে দর্শন, রাজনীতি এবং অর্থনীতি নিয়ে পড়ার জন্য অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে যান।
পরবর্তীতে স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে এমবিএ পড়ার সময় স্ত্রী অক্ষতা মূর্তির সাথে পরিচয় হয় তার। পরবর্তীতে তারা বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের দুই মেয়ে রয়েছে। এই দম্পতির মেয়ে নারায়ণ মূর্তি একজন ভারতীয় বিলিয়নেয়ার এবং আইটি পরিষেবা জায়ান্ট কোম্পানি ইনফোসিসের সহ-প্রতিষ্ঠাতা। কনজারভেটিভ পার্টির নেতৃত্বের প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রচারণার সময় প্রায়ই জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে নিজ মেয়েদের কথা উল্লেখ করতেন ঋষি। বিবিসি টেলিভিশন বিতর্কের সময় জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছিলেন, তিনি ছোট দুই মেয়ের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়েছিলেন, যারা আমার পরিবারের এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞ। সুনাকের সম্পদ এবং প্রাইভেট স্কুলের পটভূমি অন্যান্য টিভি বিতর্কেও আলোচনায় এসেছিল।
এছাড়া ২০০১ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত গোল্ডম্যান স্যাচের বিশ্লেষক ছিলেন তিনি। তাকে ব্রিটেনের সবচেয়ে ধনী সংসদ সদস্যদের একজন মনে করা হলেও নিজের সম্পদের ব্যাপারে কখনই প্রকাশ্যে মন্তব্য করেননি সুনাক।২০১৫ সাল থেকে ইয়র্কশায়ারের রিচমন্ডের কনজারভেটিভ দলীয় এমপি তিনি। পূর্বসূরি বরিস জনসনের মেয়াদে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের আগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মের সরকারের একজন জুনিয়র মন্ত্রী হয়েছিলেন সুনাক। ইউরোপ থেকে ব্রিটেনের বহুল আলোচিত বিচ্ছেদ ব্রেক্সিটের সমর্থক ছিলেন তিনি। ইয়র্কশায়ার পোস্টকে বলেছিলেন, তিনি বিশ্বাস করেন ব্রেক্সিট যুক্তরাজ্যকে ‘মুক্ত, সুন্দর এবং আরও সমৃদ্ধ’ করে তুলবে। সূত্র: রয়টার্স, বিবিসি, স্কাই নিউজ।
No comments:
Post a Comment