সংযুক্ত আরব আমিরাত বেশ ঢাকঢোল পিটিয়ে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ঘোষণা দিয়েছিল। ওয়াশিংটনের মধ্যস্থতায় এ লক্ষ্যে গত ১৩ আগস্ট দেশ দুটির মধ্যে একটি তথাকথিত শান্তি চুক্তিও হয়েছে। তবে আমিরাতের ওই চুক্তির ঘোষণার দুই সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যেই ইসরায়েলের প্রতি মোহ ভাঙতে শুরু করেছে।
মার্কিন পৌরহিত্যে হওয়া ওই চুক্তিও আরব দুনিয়া ও ইহুদি দেশটির মধ্যে থাকা ফাটল জুড়তে সক্ষম নয়, তা ফের একবার স্পষ্ট হয়ে গেল। আবুধাবি সোমবার, মার্কিন এফ-৩৫ বিমানের বিক্রি সংক্রান্ত ফ্যাসাদের জেরে ওয়াশিংটন ও জেরুজালেমের সঙ্গে বৈঠক বাতিল করে দিয়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরাত যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি অত্যাধুনিক এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান সংগ্রহে অনেকটা মরিয়া। আমিরাতের কাছে এই যুদ্ধবিমান খোদ ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বিক্রির প্রকাশ্য বিরোধিতা করেছেন। এর জেরে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে আমিরাতের এফ-৩৫ কেনার উদ্যোগ ভেস্তে যেতে শুরু করে। যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও আমিরাতের মধ্যে আমিরাতকে এফ-৩৫ সরবরাহের অনিশ্চয়তা নিয়ে ত্রিদেশীয় একটি বৈঠক অনুষ্ঠানের কথা ছিল।
তবে আমিরাত এরই মধ্যে ওই বৈঠকে অংশগ্রহণের পরিকল্পনা থেকে সরে এসেছে। আর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলের সামরিক আধিপত্য নিশ্চিত করবে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এর আগে আমিরাতের পক্ষ থেকে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ঘোষণার পুরস্কার হিসেবে দেশটির কাছে এ যুদ্ধবিমান বিক্রির ঘোষণা দিয়েছিলেন। গত সপ্তাহেই ট্রাম্প জানিয়েছিলেন, এ সংক্রান্ত একটি চুক্তি পর্যালোচনা করা হচ্ছে। ছয় মাসের মধ্যে চুক্তিটি আলোর মুখ দেখবে যুক্তরাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাও সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন। সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, সংযুক্ত আরব আমিরাত লকহিড মার্টিন করপোরেশনের তৈরি এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান কিনতে আগ্রহী। ইসরায়েল আগে থেকেই এটি ব্যবহার করে আসছে। এখন আমিরাতের আগ্রহের বিষয়টি পর্যালোচনা করা হচ্ছে।
রয়টার্স জানিয়েছে, আমিরাতের কাছে ব্যয়বহুল এসব যুদ্ধবিমান বিক্রিতে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহ থাকলেও এ নিয়ে মিত্র ইসরায়েলের বিরোধিতার মুখে পড়তে হয়েছে ট্রাম্প প্রশাসনকে। আমিরাত ইসরায়েলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বজায় রাখার মরিয়া চেষ্টা চালালেও পরিস্থিতির দৃশ্যমান কোনো উন্নয়ন ঘটেনি। যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান ও ইসরায়েলের মতো মিত্র দেশগুলোর কাছে এফ-৩৫ বিক্রি করেছে। তবে মিত্র ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হতে পারে; এমন আশঙ্কায় ওয়াশিংটন তার অত্যাধুনিক সামরিক সরঞ্জাম আরব দেশগুলোর কাছে বিক্রি করে না। এখন ইসরায়েলের সঙ্গে মৈত্রীর পথে হাঁটার পরও এ নিয়ে দেশটির কাছ থেকেই প্রবল বিরোধিতার মুখে পড়েছে আমিরাত। মার্কিন সংবাদমাধ্যম এক্সিওস জানিয়েছে, আমিরাতের ইসরায়েলমুখী হওয়ার একটি বড় কারণ ছিল এই এফ-৩৫। এদিকে, এফ-৩৫ নিয়ে মতবিরোধ সত্ত্বেও দুদেশের মধ্যে উচ্চ পর্যায়ের সফর বিনিময় শুরু হয়েছে।
No comments:
Post a Comment