সাবেক তথ্য সম্প্রচার সচিব মকবুলের বাধ্যতামূলক অবসরের পর জানা গেছে, তার বিরুদ্ধে সরকারি চাকরিবিধি লঙ্ঘন, শৃঙ্খলা ভঙ্গসহ সরকারি গোপন তথ্য পাচারের অভিযোগ তদন্ত করা হচ্ছে। আর তিনি এই অভিযোগে যেকোনো সময় গ্রেফতার হতে পারেন। যদিও বাধ্যতামূলক অবসর সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন পাওয়ার পরদিন মকবুল হোসেন গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়েছিলেন এবং সেখানে তিনি দাবী করেছিলেন যে, তিনি কোনো অন্যায় করেননি।
তারেক জিয়ার সঙ্গে মকবুলের লন্ডনে তো নয়ই, কোনোদিনই দেখা হয়নি। এমনকি নয়াপল্টনে তিনি বিএনপি কার্যালয়ের উল্টো পাশে একটি অফিসে যেতেন বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে যে তথ্য প্রকাশিত হয়েছে, তাও তিনি অস্বীকার করেছেন। কিন্তু তিনি অস্বীকার করুক আর যাই করুক না কেন, তার বিরুদ্ধে সরকার একটি অফিশিয়াল সিক্রেটস এ্যাক্টে মামলা করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। একটি গোয়েন্দা সংস্থা দীর্ঘদিন তথ্য ও সম্প্রচার সচিব মকবুল হোসেনের কর্মকান্ডের উপর নিবিড় পর্যবেক্ষণ করছিল এবং প্রধানমন্ত্রী তাদের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
সরকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুর ওপর একটি বায়োপিক নির্মাণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিলো। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ভারতের প্রথিতযশা চলচ্চিত্র পরিচালক যিনি বায়োপিক নির্মাণে বিশ্বের অন্যতম সেরা শ্যাম বেনেগালকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। এই চলচ্চিত্রের নির্মাণের কাজটি শ্যাম বেনেগাল দীর্ঘদিন ধরে করে এখন শেষ পর্যায়ে নিয়ে এসেছেন। এ বছরই মুজিব বায়োপিকের ট্রেইলার কান চলচ্চিত্র উৎসবে দেখানো হয়েছে। সম্পাদনার কাজ এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে। সরকারি সূত্রগুলো জানিয়েছে যেকোনো সময় এর মুক্তির তারিখ ঘোষণা করা হতে পারে।
সরকারের উদ্যোগে মুজিব বায়োপিকটি নির্মিত হলেও এটির মূল মন্ত্রণালয় ছিল তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়। আর এই বায়োপিক নির্মাণের খরচসহ আনুষঙ্গিক বিষয় গুলো তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে মনিটরিং করা হয়েছে। একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছেন যে, মকবুল হোসেন মুজিব বায়োপিকের গুরুত্বপূর্ণ ফাইল বিএনপি-জামায়াতগোষ্ঠীর কাছে পাচার করেছেন এবং লন্ডনে তিনি এই সংক্রান্ত একটি ফাইলের ছায়াকপি নিয়ে গেছেন, গোয়েন্দাদের হাতে এমন নিশ্চিত তথ্য রয়েছে।
গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সূত্রে বলা হচ্ছে যে, তিনি মুজিব বায়োপিকের ফাইলটি এই বছরের জানুয়ারি মাসেই তিনবার সেকশন থেকে নিয়ে আসেন, মকবুল হোসেন বিভিন্ন আর্থিক লেনদেনসহ নানা বিষয় সংক্রান্ত এই ফাইলটি তাঁর দপ্তরে তিনদিন রেখেছিলেন বলে ডকশিটে দেখা যায়। তার একজন ব্যক্তিগত কর্মকর্তা স্বীকার করেছেন যে, ওই ফাইলে পুরো ছায়াকপি তিনি সংগ্রহ করেছেন এবং তিনি এই ছায়াকপি নিজ হেফাজতে রেখেছিলেন। পুরো ফাইলটি কপি হবার পর মকবুল হোসেন এই ফাইলটি আবার সেকশনে ফেরত পাঠান। বিষয়টি তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রীকে জানানো হয় অনেক পরে এবং মন্ত্রীকে জানানোর পর এই বিষয় নিয়ে মকবুল হোসেনকে প্রশ্ন করেছেন বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। মকবুল হোসেন সেই সময়ে কোন সদুত্তর দিতে পারেননি।
উল্লেখ্য যে, গত মার্চে মকবুল হোসেন লন্ডনে সফরে যান এবং ওই সফরে তিনি সরকারি কর্মসূচির বাইরে একাধিক ব্যক্তিগত কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেছিলেন এবং সেখানে তিনি কিংস্টন স্টেশনের কাছে একটি পাঁচতারকা হোটেলে নৈশভোজে আমন্ত্রিত হন। সেখানে তিনি সরকারি কর্মকর্তা, দূতাবাসের কোনো ব্যক্তি এমনকি তার সফরসঙ্গী কাউকেও রাখেননি।
গোয়েন্দা সূত্রগুলো বলছে, যেখানে তারেক জিয়ার নিজস্ব লোকজনের সঙ্গে মকবুল হোসেন কথা বলেছেন এরকম পর্যাপ্ত তথ্য আছে , তাদের মধ্যে একজন ২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বেগম খালেদা জিয়ার সহকারী প্রেস সচিবের দায়িত্ব পালন করেছিলেন এবং তারেক জিয়ার ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত ছিলেন। অন্য একজন লন্ডনে তারেক জিয়ার ঘনিষ্ঠ যিনি একটি বেসরকারি চ্যানেলে কর্মরত ছিলেন। মকবুল হোসেন তাদের কাছেই এই গুরুত্বপূর্ণ ফাইলটি হস্তান্তর করেছেন, এমন তথ্য আছে গোয়েন্দাদের হাতে।
আর গোয়েন্দারা এ ব্যাপারে আরও তদন্ত করছেন। অফিশিয়াল সিক্রেটস এ্যাক্টে এটি দন্ডনীয় অপরাধ। একাধিক সূত্র বলছে, তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, নারী কেলেঙ্কারিসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। তবে এই স্পর্শকাতর বিষয়ের কারণেই তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। এ ব্যাপারে খুব শীঘ্রই মকবুলের বিরুদ্ধে মামলা হবে এবং তিনি গ্রেপ্তার হতে পারেন বলেও একাধিক সূত্র আভাস দিয়েছে।
No comments:
Post a Comment